আখলাক বা চরিত্র ও নৈতিক মূল্যবোধ

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - | NCTB BOOK
44
44

আখলাক অর্থ স্বভাব ও চরিত্র। স্বভাব ও চরিত্রকে আরবিতে আখলাক বলে। চরিত্র ভালো হলে জীবন সুন্দর হয়। সুখের হয়। যার চরিত্র সুন্দর এবং আচরণ ভালো সে সদা সত্য কথা বলে, পিতা-মাতার কথা শোনে, শিক্ষককে সম্মান করে, সৃষ্টির সেবা করে, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করে, সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করে ।

আর যার চরিত্র সুন্দর নয় এবং আচরণ মন্দ সে মিথ্যা বলে, পিতামাতার অবাধ্য হয়, মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করে না, সৃষ্টির সেবা করে না ইত্যাদি। যার চরিত্র ও আচরণ সুন্দর সবাই তাকে ভালোবাসে। বয়সে বড় হলে সবাই তাঁকে সম্মান করে। শ্রদ্ধা করে। আর বয়সে ছোট হলে সবাই তাকে আদর করে। স্নেহ- যত্ন করে। সবাই বলে তার চরিত্র ভালো। সে উত্তম লোক।

মহানবি (স) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই লোক যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।”

যার চরিত্র সুন্দর নয়, আচরণ ভালো নয়, কেউ তাকে ভালোবাসে না। শ্রদ্ধা করে না । আদর ও স্নেহ করে না। সবাই তাকে ঘৃণা করে। অবিশ্বাস করে। কেউ তাকে সাহায্য সহযোগিতা করে না ।

Content added By

আখলাক ও নৈতিক মূল্যবোধের একটি আদর্শ কাহিনী

9
9

হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র) উচ্চ শিক্ষার জন্য বাগদাদ রওনা দেবেন। মা তাঁর জামার আস্তিনের মধ্যে চল্লিশটি সোনার মুদ্রা সেলাই করে দিলেন। আর রওনা দেওয়ার পূর্বে পুত্রকে বললেন, ‘সর্বদা সত্য কথা বলবে, কখনো মিথ্যা বলবে না।' তিনি কাফেলার সাথে বাগদাদ রওনা দিলেন। পথিমধ্যে একদল ডাকাত কাফেলার ওপর হামলা করল। ডাকাতের দল কাফেলার সকলকে একের পর এক তল্লাশি করল। তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিল। তারা আব্দুল কাদির জিলানী (র)-কে জিজ্ঞাসা করল, 'হে বালক! তোমার কাছে কী আছে? তিনি নির্ভয়ে উত্তর দিলেন, ‘চল্লিশটি সোনার মুদ্রা আছে'। ডাকাতরা ধমকের সুরে বলল, কোথায় ‘সোনার মুদ্রা’? উত্তরে আব্দুল কাদির জিলানী (র) বললেন, এগুলো আমার জামার আস্তিনের মধ্যে সেলাই করা আছে।' তাঁর সততা ও সত্যবাদিতা দেখে ডাকাত দলের সরদারের বিবেক খুলে গেল। সে অনুতপ্ত হলো। তারা সকলে তওবা করল এবং সৎপথ ধরল।

এভাবে সুন্দর আখলাক ও নৈতিক মূল্যবোধ মানুষকে মুক্তি দেয়। মানব সমাজ আলোর পথ পায়। বস্তুত, সুন্দর আখলাক ও নৈতিক মূল্যবোধ মানবজীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের চরিত্র সুন্দর ও আচরণ ভালো করতে হলে আমরা-

আল্লাহর ইবাদত করব, পিতা-মাতার কথা শুনব।

শিক্ষককে সম্মান করব, সত্য কথা বলব।

সৃষ্টির সেবা করব, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করব। 

মানবাধিকার ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলব। 

আমরা কতগুলো মন্দ আচরণ থেকে দূরে থাকব। যেমন- 

আমরা মিথ্যা কথা বলব না, বাগড়া-বিবাদ করব না। 

হিংসা করব না, চুরি-ডাকাতি করব না।

ধূমপান করব না, দেশের ও জনগণের ক্ষতি করব না।

আল্লাহর ইবাদত ভুলব না, কটু কথা বলব না।

পরিকল্পিত কাজ : ভালো আচরণ এবং মন্দ আচরণের পৃথক পৃথক চার্ট তৈরি করা ।

Content added By

সৃষ্টির সেবা

79
79

আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন মানুষ, জীবভূ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ। তিনি সৃষ্টি করেছেন চাঁদ-সুরুজ, গ্রহ-তারা, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা এবং আরো অনেক কিছু। আল্লাহর এই সব সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সবার সেরা। আর তিনি এই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। তাই মানুষ আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া দেখাবে। সহানুভূতি প্রদর্শন করবে। এরই নাম সৃষ্টির সেবা।

যারা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া দেখায় এবং সৃষ্টির সেবা করে আল্লাহ তাদের প্রতি খুশি হন। তাদের ভালোবাসেন। তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।

আখলাক বা চরিত্র ও নৈতিক মূল্যবোধ

মহানবি (স) বলেছেন:

অর্থ: “পৃথিবীতে যা কিছু আছে তাদের প্রতি দয়া দেখাও। আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”

আল্লাহর ইবাদতের পর আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা। আল্লাহর সকল সৃষ্টির সেবা করা। আমরা একে অপরের প্রতি দয়া দেখাব। সহানুভূতিশীল হব। যদি আমরা কারো প্রতি দয়া না দেখাই তাহলে আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। আমাদের ওপর দয়া করবেন না। মহানবি (স) বলেছেন:

অর্থ: যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া দেখায় না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া দেখান না ।

আমরা মানুষের সেবা করব। অসুস্থ ব্যক্তির সেবাযত্ন করব। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেব। বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করব। নিরাশ্রয়কে আশ্রয় দেব। দরিদ্র ও ভিক্ষুককে সাহায্য করব। বেকার লোকদের কাজের ব্যবস্থা করে দেব। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী বিপদে পড়লে সাহায্য-সহযোগিতা করব। মহানবি (স) বলেছেন, 'তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর এবং বন্দিকে মুক্তি দাও।'

শুধু মানুষ নয়, সকল জীবজন্তু, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, গাছপালাসহ আল্লাহর সকল সৃষ্টির সেবা করব। গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল ইত্যাদি কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেব না। প্রহার করব না। এদের যত্ন করব। কোনো জীবজন্তু বিপদে পড়লে তাকে উদ্ধার করব। তাকে বাঁচাব। আর এ সবই নৈতিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে,একদা এক মহিলা পথের পাশে দেখতে পান যে, একটি কুকুর পিপাসায় খুবই কাতর। আর্তনাদ করছে। এখনই মারা যাবে এমন অবস্থা। মহিলার দয়া হলো। তিনি কাছেই একটি ৰূপ দেখতে পেলেন এবং কূপ থেকে পানি আনলেন। কুকুরের মুখের সামনে পানি ধরলেন। পানি পান করে কুকুরটি আরাম পেল। সে প্রাণে বেঁচে গেল।

মহিলা আল্লাহর সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া দেখালেন। কুকুরটিকে সেবা করলেন। এ জন্য আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতি খুশি হলেন। তার জীবনের সব পাপ ক্ষমা করে দিলেন।

 

একটি আদর্শ কাহিনী

ফুয়াদ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। একদিন সে ভুলে যাওয়ার পথে একটি পর পাড়ি দেখল। গাড়িতে মালামাল বোঝাই খুব বেশি। এদিকে গাড়ির চাকা খাদে পড়ে গেছে। গরু খাদ থেকে গাড়িটি টেনে তুলতে পারছে না। গরুর খুব কষ্ট হচ্ছে। গরুর কষ্ট দেখে ফুয়াদের খুব কষ্ট হলো। তার দয়া হলো। সে গাড়ির গাড়োয়ানকে সাহায্য করল। গাড়িটি ঠেলে খাদ থেকে রাস্তার ওপরে উঠিয়ে দিল।

অতপর সে গাড়োয়ানকে বলল, চাচাজান, গরু-মহিষ তাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারে না। বেশি বোঝা চাপালে এদের খুব কষ্ট হয়। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। গুনাহ হয়। গাড়োয়ান ফুয়াদের ব্যবহারে খুব খুশি হলো। সে ফুয়াদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করল।

আমাদের মহানবি (স) সৃষ্টির সেবার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তিনি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিতেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় মসজিদে সকলের খোঁজখবর নিতেন। তিনি শুধু মানব জাতির কল্যাণকামী ছিলেন না বরং আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি সদয় ছিলেন। তিনি সারা জীবন সৃষ্টির সেবা করে গেছেন। এ জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁকে 'রাহমাতুল্লিল আলামীন' বা 'সমগ্র বিশ্বের রহমত স্বরূপ' উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

পরিকল্পিত কাজ : কী কী উপায়ে সৃষ্টির সেবা করা যায় তার একটি তালিকা শিক্ষার্থীরা খাতায় সুন্দর করে লিখবে।

Content added || updated By

দেশপ্রেম

17
17

দেশপ্রেম অর্থ দেশকে ভালোবাসা, স্বদেশকে ভালোবাসা, জন্মভূমিকে ভালোবাসা। নিজের দেশের উন্নতির জন্য চেষ্টা করা এবং শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার নামই দেশপ্রেম।

আমাদের মহানবি (স) তাঁর জন্মভূমি মক্কা নগরীকে খুব ভালোবাসতেন। মক্কার লোকজনকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন। তিনি মক্কাবাসীকে সত্য ও ন্যায়পথে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রথম দিকে তারা মহানবি (স)-এর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তারা তাঁর ওপর নির্মম অত্যাচার শুরু করেছিল। শেষ পর্যন্ত তারা তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। তখন তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিজের জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।

হিজরতের সময় মহানবি (স) তাঁর জন্মভূমি মক্কানগরী ছেড়ে যেতে অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন। খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি মক্কা ছেড়ে যাওয়ার সময় অশ্রুভেজা চোখে বারবার মক্কার দিকে তাকাচ্ছিলেন। আর কাতর কণ্ঠে বলছিলেন:

             “হে মক্কানগরী, ভূমি কত সুন্দর! 

তুমি আমার জন্মভূমি, আমি তোমাকে ভালোবাসি । 

           তুমি আমার কাছে কতই না প্ৰিয় ! 

    হায়। আমার ব্রজাতি যদি ষড়যন্ত্র না করত, 

        এদেশ থেকে আমাকে তাড়িয়ে না দিত 

     আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। "

স্বদেশের প্রতি মহানবি (স)-এর কী গভীর ভালোবাসা। কী মধুর টান! কী অটুট দেশপ্রেম।

আমাদের জন্মভূমি এই বাংলাদেশ। আমাদের স্বদেশ এই বাংলাদেশ। আমরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশকে ভালোবাসব। প্রাণের চেয়েও ভালোবাসব। দেশের সকল সম্পদকে ভালোবাসব ও যত্ন করব। দেশের সম্পদ সংরক্ষণ করব। আর এগুলো করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ।

জাওয়াদের আব্বার নাম আব্দুল্লাহ আল মামুন। জাওয়াদ তার আব্বাকে জিজ্ঞাসা করল : আমরা দেশকে কীভাবে ভালোবাসব, বাংলাদেশকে কীভাবে ভালোবাসব আব্বু।

জাওয়াদের আব্বু উত্তরে বললেন, আমরা এভাবে দেশের সেবা করে দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি :

ক. দেশের সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করব, কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করব। 

খ. গৃহপালিত পশুপাখির যত্ন নেব, তাদের কোনো কষ্ট দেব না । 

গ. বৃক্ষরোপণ করব, ফলমূলের গাছ লাগাব, গাছ নষ্ট করব না, পাতা ছিঁড়ব না। ডাল ভাঙৰ না। 

ঘ. বেঞ্চে, দেয়ালে বা অন্য কোথাও আজেবাজে কিছু লিখব না, সবকিছু পরিচ্ছন্ন রাখব, সংরক্ষণ করব। 

ঙ. পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস অপচয় করব না, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করব। 

চ. দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষকে ভালোবাসব, সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

তাই তো জ্ঞানীরা বলেছেন :   

                              অর্থ : দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেশপ্রেম গড়ে তুলবে, তার একটি চার্ট খাতায় তৈরি করবে।

Content added By

ক্ষমা

15
15

ক্ষমা আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ গুণ। মানুষ ভুল করে। অন্যায় করে। গুনাহ করে। মানুষ অন্যায়-অপরাধ করার পর যদি অনুতপ্ত হয়, তাহলে আল্লাহ নিজগুণে অনুতপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। যদি তিনি মানুষের অপরাধ ও গুনাহ ক্ষমা না করতেন, তাহলে কোনো গুনাহগার ব্যক্তি তার শাস্তি থেকে রেহাই পেত না। আল্লাহ ক্ষমা পছন্দ করেন।

আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি যেমন মানুষকে ক্ষমা করে দেন, তেমনি মানুষের কর্তব্য অন্য অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া। আল্লাহ বলেন, “যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং লোকদেরকে ক্ষমা করে, এরূপ নেক বান্দাদের আল্লাহ ভালোবাসেন।”

ক্ষমা করা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। যার মন উদার, মানুষের জন্য যার দয়ামায়া বেশি, যে রাগ দমন করতে পারে, সেই ক্ষমাশীল হয়। ক্ষমাশীল ব্যক্তিকে সকলেই ভালোবাসে। আল্লাহও ভালোবাসেন । এ ধরনের লোকদের জন্য আল্লাহ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেছেন: ‘যে ক্ষমা করল,ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করে দিল, তার জন্য আল্লাহ্র কাছে পুরস্কার রয়েছে।"

একটি আদর্শ কাহিনী

আমাদের মহানবি (স)- এর সারা জীবনই ছিল ক্ষমার উজ্জ্বল আদর্শ। তিনি ছিলেন মানব জাতির পরম বন্ধু। কাফেররা তাঁর ওপর নির্মম অত্যাচার করত। তাঁকে মক্কা ছাড়তে বাধ্য করল । তিনি আল্লাহর নির্দেশে জীবন রক্ষার্থে এবং ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফে গমন করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন পালিত পুত্র যায়িদ (রা)। তায়েফবাসী তাঁর ইসলাম প্রচার শুনলো না। তারা তাঁকে লাঞ্ছিত করল । তারা পাথরের আঘাতে তাঁকে এবং যায়িদ (রা) কে রক্তাক্ত করল । আল্লাহর রহমতে তাঁরা দুজনে রক্তাক্ত অবস্থায় তায়েফ থেকে ফিরে আসলেন। কিন্তু তবুও দয়ার নবি (স) তায়েফবাসীদের জন্য বদদোয়া করলেন না। তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! তারা অবুঝ, তারা কিছুই বোঝে না। তুমি তাদের ক্ষমা কর।’

মহানবি (স) তাঁর প্রাণের শত্রুদের হাতের মুঠোয় পেয়েও কোনো দিন তাদের ওপর প্রতিশোধ নেননি। তিনি হাসিমুখে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি মক্কাবাসীকে ক্ষমা করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। মহানবি (স)-এর প্রেম ও ক্ষমার আদর্শে মুগ্ধ হয়ে মক্কাবাসী স্বেচ্ছায় দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এভাবে মহানবি (স)-এর ক্ষমার আদর্শে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মক্কানগরী তাওহিদের আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীগণ শ্রেণিকক্ষে ক্ষমার গুরুত্ব সম্পর্কে পরস্পর আলোচনা করবে এবং সকলে ক্ষমার গুরুত্ব সম্বন্ধে জানবে। সকলে ক্ষমা করা শিখবে এবং ক্ষমা করবে।

Content added By

ভালো কাজে সহযোগিতা করা এবং মন্দ কাজে বাধা দেওয়া

22
22

ছোট-বড় যত সদাচার এবং সৎ কাজ— এ সবই ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, গরিব ও দুঃস্থদের জন্য সেবা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, তাদের স্বাবলম্বনের জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, রাস্তাঘাট মেরামত ও তৈরি করা। এসব ভালো কাজে একে অপরের সহযোগিতা করতে হয়। যদি এলাকায় রাস্তাঘাট না থাকে তাহলে যাতায়াত ও চলাফেরার খুব অসুবিধা হয়। খাল ও পানির নালার উপরে পুল ও সাঁকো না থাকলে যাতায়াতের সমস্যা হয়। তাই সকলে মিলে রাস্তাঘাট, পুল ও সাঁকো তৈরি করব। একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করব। তাহলে কোনো কাজ সম্পন্ন করতে অসুবিধা হয় না ।

কাজটা সুন্দর হয়। গ্রাম ও মহল্লার সকলে মিলেমিশে ভালো কাজ করলে গ্রাম ও মহল্লাটি সুন্দর হয়। একটি আদর্শ গ্রাম ও মহল্লা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কথায় বলে-

দশে মিলে করি কাজ 

হারি জিতি নাহি লাজ।

আমরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার একটি নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করব। সকলে ডাস্টবিন অথবা নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলব। আমরা সকলে মিলে একটি ছোটখাটো গ্রন্থাগার গড়ে তুলব। অবসর সময়ে সেখানে গিয়ে বই পড়ব। আমরা সকলে মিলে রাস্তার পাশে বা ফাঁকা স্থানে গাছ লাগাব। ফুল ও সবজির বাগান করব। এগুলোর যত্ন নেব। যেখানে-সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করা উচিত নয়। আমরা সবাই মিলে প্রত্যেক পরিবারের জন্য দু-একটি করে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন তৈরি করব। আমরা মাঝে মাঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বড়দের সাথে অংশ নেব। বড়দের সাহায্য করব। আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এ ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেব। পরিবার, বিদ্যালয় ও এলাকার উন্নতি করব।

খারাপ ও অসৎ কাজই মন্দ কাজ। কোনো কিছু চুরি করা, ছিনতাই করা, ঝগড়া ও মারপিট করা ইত্যাদি মন্দ কাজ। এসব মন্দ কাজে কখনো একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতা করা উচিত নয়। মন্দ কাজে বাধা দিতে হয়। যদি আমাদের কোনো সহপাঠী বই, খাতা কিম্বা পেন্সিল চুরি করে, শ্রেণিকক্ষের মধ্যে হৈ চৈ ও গণ্ডগোল করে, কোনো কিছু দিয়ে বেঞ্চের কোনা কাটে, দেয়ালে কালির দাগ দেয়,তাহলে আমরা এসব মন্দ কাজে তাকে বাধা দেব। এগুলো করতে নিষেধ করব। যদি সে আমাদের নিষেধ না শোনে তাহলে শিক্ষকের কাছে তার এসব মন্দ আচরণের কথা জানাব। শিক্ষক তাকে এসব মন্দ কাজ করতে বিরত রাখবেন। সংশোধন করে দেবেন। বাধা দেবেন।

সব ভালো কাজে সহযোগিতা করা এবং সব মন্দ কাজে বাধা দেওয়া ইসলামের নির্দেশ এবং নৈতিক মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। মহানবি (স) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কাউকে মন্দ কাজ করতে দেখে তাহলে সে যেন নিজের শক্তি দিয়ে তাকে বাধা দেয়। আর যদি সে শক্তি দিয়ে তাকে বাধা দিতে অপারগ হয়, তাহলে উপদেশের মাধ্যমে যেন তাকে সংশোধন করে। আর যদি তাও না পারে,তাহলে সে যেন তার প্রতি ঘৃণা করে। আর এটাই দুর্বল ইমানের পরিচয়।”

আমাদের মহানবি (স) ও তাঁর সাহাবিগণ সর্বদা ভালো কাজে সহযোগিতা এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদান করতেন। ফলে তাঁদের সমাজ অত্যন্ত সুন্দররূপে গড়ে উঠেছিল। কেউ ভুলে অথবা গোপনে মন্দ কাজ করলে সে নিজেই অনুতপ্ত হতো। লজ্জা পেত। মহানবি (স)-এর কাছে চলে আসত। নিজের পাপের কথা স্বীকার করত। তওবা করত।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমরা ভালো ও সৎকাজে একে অপরকে সহযোগিতা কর। আর মন্দ ও পাপ কাজে একে অপরকে অসহযোগিতা কর।’

আমরা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলব। মহানবি (স)-এর উপদেশ মানব। ভালো কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করব। কেউ মন্দ কাজ করলে তাকে বাধা দেব। মন্দ কাজ করা থেকে বিরত রাখব। সুন্দর পরিবেশ গড়ব। সুন্দর সমাজ গড়ব। সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়ব।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা ভালো কাজের এবং মন্দ কাজের একটি তালিকা পাশাপাশি খাতায় সুন্দর করে লিখবে।

Content added By

সততা

55
55

সততা মানে সাধুতা, মানবতা, সত্যবাদিতা। নিজের স্বার্থ বড় করে না দেখা এবং অপরের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হোক তা না চাওয়ার নামই সততা। যার মধ্যে এই মহৎ গুণটি রয়েছে, তাকে সৎ ব্যক্তি বলা হয়। যার মধ্যে সততা আছে, সে ন্যায়নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে। তার মধ্যে মানবতাবোধ থাকবে। সে সর্বদা সত্য কথা বলবে এবং মানুষের বিশ্বাস অর্জন করবে। এমনকি তার চরম শত্রুরাও তাকে বিশ্বাস করবে। সততা মানুষকে ভালো কাজের দিকে পরিচালিত করে। আর ভালো কাজ মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়। তাই ইসলাম আমাদের কথাবার্তায়, কাজকর্মে ও আচার-আচরণে সততা রক্ষা করার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে।

অপরপক্ষে যে সমাজে সততার অভাব রয়েছে, সেখানে সুখ ও শান্তি নেই । সেখানে অশান্তি আর অশান্তি । সেখানে বদনাম বিরাজ করে। অসত্য এবং সততার অভাব মানুষকে সমাজে হেয় করে তোলে। যে সমাজে সত্যবাদিতা ও সততার অভাব ঘটে সে সমাজ আস্তে আস্তে ধ্বংসের পথে চলে যায়। ধ্বংস হয়ে যায়। প্রতারণা ও দুর্নীতি মে সমাজকে আচ্ছন্ন করে। মহানবি (স) বলেছেন,

 

অর্থ : সততা ও সত্যবাদিতা মানুষকে মুক্তি দেয় আর অসত্য ও মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।

সততা সম্পর্কে আমরা একটি আদর্শ কাহিনি জানব

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন হযরত ওমর (রা)। তিনি তাঁর রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ন্যায় বিচার করতেন। কোনো প্রকার অন্যায় কাজ হলে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিতেন। ছোট-বড়, আপন-পর, ধনী-দরিদ্র সকলের জন্য সমান কিার হতো। বিচারে কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব হতো না। তিনি রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশে মদিনার অলিতে-গলিতে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোজখবর নিতেন। তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতেন।

এক রাতে তিনি মদিনার পথে ঘুরতে ঘুরতে একটি কুঁড়েঘরের কাছে আসলেন। ঐ ঘরে এক দরিদ্র মা ও তার মেয়ে বসবাস করতেন। তিনি মা ও মেয়ের কথাবার্তা শুনতে গেলেন। দুধ বিক্রি করে তাদের সংসার চলত। মা তার মেয়েকে সকালে দুধের সাথে পানি মিশিয়ে দুধের পরিমাণ বাড়াতে বলল। মেয়েটি তার মায়ের কথা শুনে অনুরোধ করে কাল, মা এটা অন্যায় কাজ। যদি খলিফা এই অন্যায় জানতে পারেন তাহলে কঠিন শাস্তি দিবেন। মা কললেন এ কাজ তো খলিফা বা তাঁর লোকজন দেখতে পারবে না। জানতেও পারবেন না। মেয়েটি তার মাকে কাল খলিফা ওমর বা তাঁর লোকজন এ অন্যায় না দেখতে গেলেও স্বয়ং আল্লাহতো সবকিছু দেখছেন। তাঁর চোখ কেউ ফাঁকি দিতে পারবে না। তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন।

হযরত ওমর (রা) মা ও মেয়ের এসব কথাবার্তা শুনে বাড়িতে ফিরে গেলেন। তিনি মেয়েটির সততায় খুবই খুশি ও মুগ্ধ হলেন। তিনি তাঁর যোগ্য ও স্নেহের পুত্রের সাথে ঐ দরিদ্র মহিলার সত্যবাদী কন্যার বিয়ে দিলেন। এই মেয়েটিই হলেন খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (র)-এর নানি।

আমাদের মহানবি (স)-এর চরিত্রে এই সততা গুণটি পরিপূর্ণভাবে ছিল। তাঁর চরম শত্রুরাও এই সততার কারণে তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখত। তাঁর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে যেদিন শত্রুরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল সেদিনও তাঁর কাছে বহু লোকের অর্থ-সম্পদ আমানত ছিল। তিনি কারো কোনো অর্থসম্পদ আত্মসাৎ করেননি। নষ্টও করেননি। আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় তিনি আমানতের সব অর্থ-সম্পদ হযরত আলী (রা)-এর কাছে রেখে গিয়েছিলেন। হযরত আলী (রা) সেগুলো নিজ নিজ মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এটাই সততার আদর্শ ও দৃষ্টান্ত ।

পরিকল্পিত কাজ : সততা কাকে বলে, শিক্ষার্থীরা খাতায় সুন্দর করে বুঝিয়ে লিখবে।

Content added By

পিতা-মাতার খেদমত

33
33

এই পৃথিবীতে পিতা-মাতার চেয়ে আপনজন আমাদের আর কেউ নেই। পিতামাতার ওছিলাতেই আমরা দুনিয়াতে এসেছি। তাঁদের স্নেহ ও আদরে আমরা লালিত-পালিত এবং বড় হয়েছি। তাঁরা ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে আমাদের বড় করে তোলেন। শিশুকালে আমাদের মলমূত্র পরিষ্কার করেন। আমাদের অসুখ-বিসুখ হলে অনেক সেবাযত্ন করেন । আমাদের আনন্দে তাঁরা আনন্দ পান। আমাদের দুঃখ-কষ্টে তাঁরাও দুঃখ-কষ্ট পান। তাঁরা সব সময় আমাদের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করেন। আমাদের সুস্থতা ও সুখ-সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এহেন হিতাকাঙ্ক্ষী পিতা-মাতার প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

আমরা সবসময় পিতা-মাতার খেদমত করব। পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করব। তাঁদের আদেশ-নিষেধ শুনব এবং মেনে চলব। তাঁদের সম্মান দেখাব। তাঁদের সেবাযত্ন করব। তাঁরা অসুস্থ হলে সেবা করব। চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। তাঁরা যাতে সুখে- শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখব। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

অর্থ: তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।

আমরা পিতা-মাতার মনে সামান্যতম কষ্ট দেব না। দুঃখ দেব না। তাঁদের সামনে গালিগালাজ করব না। তাঁদের কটু কথা বলব না এবং গালি দেব না । তাঁদের মন্দ বলব না। তিরস্কার করব না। তাঁদের সাথে খারাপ ব্যবহার করব না। আমরা তাঁদের সামনে বা অগোচরে এমন কথা বলব এবং এমন কাজ করব যা তাঁরা দেখলে বা শুনলে খুশি হন। তাঁরা খুশি হলে আল্লাহও আমাদের ওপর খুশি হবেন। মহানবি (স) বলেছেন-

অর্থ: পিতার সন্তুষ্টিতে প্রতিপালকের সন্তুষ্টি আর পিতার অসন্তুষ্টিতে প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি।

পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে সন্তানের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ সময় যাতে তাঁদের সামান্যতম দুঃখ-কষ্ট ও অসুবিধা না হয়, সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখব। তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত করব। তাঁদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে সর্বদা নিম্নোক্ত দোয়া করব:

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক। পিতা-মাতা আমাকে যেমন শৈশবে স্নেহ-যত্নে লালন-পালন করেছেন, আপনি তাঁদের প্রতি ঠিক তেমনি দয়া করুন ।

এখন আমরা পিতা-মাতার খেদমতের ব্যাপারে একটি আদর্শ কাহিনী জানব :

হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র) ইরানের অধিবাসী ছিলেন। তিনি আম্মাকে সব সময় খেদমত করতেন। সেবাযত্ন করতেন। তাঁর আম্মাও তাকে খুবই আদর-স্নেহ করতেন। একদা তাঁর আম্মা অসুস্থ ছিলেন। তিনি তাঁর পুত্রের কাছে পানি চাইলেন। পুত্র বায়েজিদ আশপাশে কোথাও পানি পেলেন না। অবশেষে নদী থেকে পানি আনলেন। পানি নিয়ে আসতে একটু দেরি হয়েছে। তাঁর আম্মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। শীতের সময় ছিল তখন। বায়েজিদ (র) ভাবলেন আম্মাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে উঠালে তিনি কষ্ট পাবেন। তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত হবে, তাই তিনি সারারাত পানির পাত্র হাতে নিয়ে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কনকনে শীত। শীতে তার হাত অবশ হয়ে আসছিল। কিন্তু তবু তিনি আম্মাকে ডাকলেন না । ঘুম ভাঙালেন না। দাঁড়িয়ে রইলেন।

শেষ রাতে আম্মার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। শিয়রে তাঁর ছেলেকে পানির পাত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি অবাক হলেন এবং খুব খুশি হলেন। তিনি প্রাণভরে ছেলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ মায়ের দোয়া কবুল করলেন। পরবর্তীতে ছেলেটি আল্লাহর বিশ্ববিখ্যাত ওলি বায়েজিদ বোস্তামী নামে পরিচিত হলেন। আর এটাই নৈতিক মূল্যবোধের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।

এভাবে পিতা-মাতার খেদমত করলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। পিতা-মাতার খেদমত ও সেবাযত্নের মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের চরম সুখশান্তি। মহানবি (স) বলেছেন,

অর্থ: মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা পিতা-মাতার খেদমত সম্পর্কে জানবে। পরস্পর আলোচনা করবে এবং খাতায় লিখবে।

Content added By

শ্রমের মর্যাদা

19
19

শ্রম অর্থ মেহনত, পরিশ্রম, চেষ্টা, খাটুনি। আমরা সবাই শ্রম দিই। চেষ্টা করি, কেউ চাকরিতে শ্রম দিই, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্রম দিই। কেউ চাষাবাদে শ্রম দিই। কেউ লেখাপড়ায় শ্রম দিই। কেউ খেলাধুলায় শ্রম দিই। চেষ্টা ও শ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

অর্থ : মানুষ যা চেষ্টা করে তাই পায় ।

একটি ঘটনা

ফুয়াদ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সে রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে। মেসওয়াক করে। হাতমুখ ধুয়ে ওযু করে। ফজরের সালাত আদায় করে। কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করে। অতঃপর তার আম্মুর কাছে পড়তে বসে। সে প্রতিদিনের পড়া তৈরি করে নিয়ে স্কুলে যায়। শিক্ষক ক্লাসে পড়ার মধ্য থেকে তাকে কোনো প্রশ্ন করলে সে দাঁড়িয়ে উত্তর দেয়। শিক্ষক তার ওপর খুব খুশি হন। শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা পড়াশোনায় শ্রম ও মনোযোগ দিলে সবাই পড়া শিখতে পারবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। চেষ্টা ও পরিশ্রমই শেখার ও জানার চাবিকাঠি।

আমরা অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে লজ্জাবোধ করি। মনে করি যে, কাজ করলে লোকে ঘৃণা করবে। চাকর বলবে। কিন্তু এ রকম মনে করা ঠিক নয়। কারণ আমরা সবাই শ্রম নিই। আমরা সকলে শ্রমিক। দেশের ছোট-বড় শিক্ষিত, অশিক্ষিত সবাই শ্রম দেন এবং বিনিময়ে অর্থ উপাজন করেন। তাই কোনো শ্রম বা শ্রমিককে ঘৃণা করতে নেই। প্রত্যেক শ্রমিককে তার শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে। তাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। তাকে স্নেহ ও আদর করতে হবে।

আমাদের মহানবি (স) সব সময় নিজের কাজ নিজে করতেন। তিনি কখনো কাজে অবহেলা করতেন না। কোনো কাজকে ঘৃণা করতেন না। কাজ ফেলে রাখতেন না। অপরের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তিনি ছেঁড়া জামা-কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। ময়লা জামা-কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করতেন। ঘর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতেন। পানাহারের প্লেট-গ্লাস নিজেই ধুতেন। বাসায় মেহমান আসলে তাকে যত্ন করতেন। তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো নিজ হাতে সব কাজ করতেন। আনন্দ পেতেন। মহানবি (স) গৃহকর্মীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা কাজ করে, তারা তোমাদের ভাই। নিজে যা খাবে, তাদের তা খাওয়াবে। নিজে যা পরিধান করবে, তাদেরও তা পরতে দেবে। কাজকর্মে তাদের সাহায্য করবে। তাদের বেশি কষ্ট দেবে না। তাদের মর্যাদা করবে। তাদের শ্রমের মর্যাদা দেবে।’

আমাদের অনেকের বাসায় গরিব অসহায় লোকজন ও মহিলারা নানা রকম কাজকর্ম করে থাকে। ছোট ছোট বিভিন্ন বয়সের গরিব ছেলেমেয়েরা কাজকর্ম করে। আমরা তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করব। কাজের লোকজন বয়সে বড় হলে তাদের সালাম দেব। সম্মান করব। মর্যাদা দেব। আর বয়সে ছোট হলে তাদের আদর করব। যত্ন নেব। নিজেরা যা খাব, তাদেরও তাই খেতে দেব। তাদের কাজে সাহায্য করব। তাদের কোনো কষ্ট দেব না। তাদের দুঃখ দেব না। তারা আমাদের মতো মানুষ। তারা আমাদের ভাইবোন। আমাদের যেমন মানমর্যাদা আছে, তাদেরও তেমনি মানমর্যাদা আছে। আমরা তাদের সম্মান করব। তাদের কাজের ও শ্রমের মর্যাদা দেব। আর এই শ্রমের মর্যাদা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ।

পৃথিবীতে কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। কোনো কর্মী ও শ্রমিক নগণ্য নয়। প্রত্যেক কৰ্মী ও শ্রমিকের হাতই উত্তম হাত। শ্রমের উপার্জনই উত্তম উপার্জন। শ্রমিকের কাজ শেষ হলে তার পারিশ্রমিক সাথে সাথেই দিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে শ্রমের ন্যায্য মর্যাদা দেওয়া হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটাই নৈতিক মূল্যবোধ।

মহানবি (স) বলেছেন, 'শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।'

পরিকল্পিত কাজ : আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করলে আমাদের মর্যাদা বাড়বে, না কমবে? শিক্ষার্থীরা এ প্রশ্নের উত্তরটি খাতায় সুন্দর করে লিখবে।

Content added || updated By

মানবাধিকার ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব

10
10

মানুষের অধিকারকে মানবাধিকার বলা হয়। মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বৃদ্ধ-যুবক ও শিশু সবাই একসাথে বসবাস করে। আবার এদের মধ্যে অনেকে পঙ্গু, বিকলাঙ্গ ও ইয়াতীম। এরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকে। এসব মানুষের অধিকার রয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ এক ও অভিন্ন। ভাষা, বর্ণ, বংশ ও অঞ্চলবিশেষে মানুষের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সবাই মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত । মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সকলেই সমান। সকলের সমান অধিকার রয়েছে। ইসলাম সকল মানুষের ন্যায্য অধিকার দান করেছে।

ইসলামপূর্ব যুগে মানুষ বেচাকেনা হতো। তারা কেনা গোলামের ওপর নির্মম অত্যাচার করত। কেনা গোলামের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। সে বেতনও পেত না। মালিকের খেয়াল-খুশিমতো তাকে চলতে হতো। মালিক তার ওপর নির্মম অত্যাচার করলেও সে কোনো প্রতিবাদ করতে পারত না। সব অত্যাচার সহ্য করতে হতো। এহেন কেনা গোলামের সাথে মহানবি (স) এবং সাহাবিগণ অত্যন্ত মধুর আচরণ করেছেন। হযরত বেলাল (রা) এবং আরও অনেক কেনা গোলামকে তাঁরা মুক্ত করে দিয়েছিলেন। হযরত যায়িদ (রা) ছিলেন হযরত খাদিজা (রা)-এর কেনা গোলাম। মহানবি (স) তাঁকে নিজ পুত্রের ন্যায় স্নেহ করতেন এবং তাঁকে সেনাপতির পদ দান করেছিলেন। এভাবে ইসলাম মানবাধিকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর এটাই নৈতিক মূল্যবোধের অবিস্মরণীয় ইতিহাস ।

মানবাধিকার সম্পর্কে একটি আদর্শ কাহিনী

একদিন মহানবি (স) দেখলেন যে রাস্তার ওপর একটি বালক শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে। তার পরনে ছিল ছেঁড়া নোংরা জামা-কাপড়। মাথায় ছিল ভারী লাকড়ির বোঝা। তাকে দেখে মহানবি (স)-এর মনে দয়া হলো। তিনি বালকটিকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে বালকটির পিতা-মাতা নেই। সে রোজ জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনে। আর তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বালকটির কষ্টের কাহিনী শুনে মহানবি (স)-এর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। তিনি বালকটিকে আদর করলেন এবং তাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে আসলেন। তিনি বালকটিকে হযরত খাদিজা (রা)-এর কাছে দিয়ে বললেন, ‘বালকটি ইয়াতীম, তুমি একে স্বীয় পুত্রের ন্যায় স্নেহযত্ন দিয়ে লালন-পালন করবে।' মহানবি (স) এভাবে বালকটিকে আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকারের আদর্শ স্থাপন করেছেন।

পৃথিবীর সকল মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ) এবং মাতা হাওয়া (আ) । আমরা সকলে আদম (আ) এবং হাওয়া (আ)-এর সন্তান। অতএব, আমরা সকল মানুষ ভাই ভাই। মানব জাতি হযরত আদম (আ)-এর বংশধর। আস্তে আস্তে এই মানব জাতি পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং বসবাস করছে। এদের আকৃতি ও বর্ণ ভিন্ন ভিন্ন। তবুও এরা ভাই ভাই। বিশ্বের সকল মানুষ ভাই ভাই। এরা সবাই আদম (আ) হতে সৃষ্ট।

আমরা বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ও কলহ-বিবাদ ভুলে যাব। বিশ্বের সবাই ভাই ভাই হিসেবে মিলেমিশে বসবাস করব। সকল দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করে বিশ্বভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হব। আর কোনো হিংসাবিদ্বেষ করব না। কারো কোনো অনিষ্ট করব না । একে অপরের উপকার করব।

মহানবি (স) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে আদম (আ) হতে,আর আদম (আ) মাটি হতে (সৃষ্ট)।’

আমরা বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ব। মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করব। সোনার বাংলাদেশ গড়ব। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা মানবাধিকার এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা খাতায় সুন্দর করে লিখবে।

Content added || updated By

পরিবেশ

7
7

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে এই সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়-পর্বত এ সবকিছুই আমাদের পরিবেশ। এগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলা হয়। তা ছাড়া ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সামাজিক পরিবেশের অন্তভুক্ত। এগুলো মানুষ তৈরি করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এসব পরিবেশের প্রয়োজন ৷

পরিবেশ সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ পরিবেশ আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করে ৷ বড় বড় গাছ কেটে আমরা দরজা, জানালা, ঘরের আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরি করি। তা ছাড়া লাকড়ি হিসেবেও ব্যবহার করি। পশুপাখির মাংস আমরা খাই। গাভী আমাদের দুধ দেয়। আমাদের সুস্থ শরীরের জন্য বায়ুর প্রয়োজন। বিদ্যালয়ে আমরা লেখাপড়া করি। মসজিদে আমরা ইবাদত করি। সালাত আদায় করি। পুকুর নদী ও জলাশয় থেকে আমরা মাছ পাই। রাস্তাঘাট আমাদের চলাচলের প্রধান ব্যবস্থা। মাঠে আমরা খেলা করি।এ জন্য পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ করব। পরিবেশ সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম। মানুষ পরিবেশ সংরক্ষণ করবে। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য নিম্নোক্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়।

ক) বৃক্ষ রোপণ করবে। বিনা প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করা যাবে না। গাছের ডালপালা ভাঙা যাবে না। গাছের পাতা ছেঁড়া, নষ্ট করা যাবে না। 

খ) অকারণে পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ হত্যা করা যাবে না। 

গ) যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করা যাবে না । 

ঘ) যেখানে-সেখানে কফ, থুথু এবং ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।

ঙ) গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে। তাই যেখানে-সেখানে কলকারখানা নির্মাণ করা যাবে না ।

চ) পুকুরে গরু-মহিষ গোসল করালে পানি দূর্গন্ধ ও দূষিত হয়। এতে পরিবেশ নষ্ট হয়। ভাই পুকুরে গরু-মহিষ গোসল করানো যাবে না।

ছ) ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, খেলার মাঠ ও রাস্তাঘাট সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

Content added By

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

97
97

প্রাকৃতিক কোনো দূর্ঘটনা বা বিপর্যয় যখন কোনো জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তোলে, তখন তাকে আমরা বলি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হঠাৎ করে আসে। এর ওপর সাধারণত মানুষের কোনো হাত থাকে না। যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, সুনামি, ধরা, ভূমিকম্প ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হয়। যেমন, জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহে সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকে যায়। ফলে গাছপালা, মৎস্যখামার ও শস্যক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। কৃষিজমির ক্ষতি হয় । জমির উর্বরা শক্তি কমে যায়। কৃষি উৎপাদন কমে যায় ।

আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলা ও সিডরের নাম শুনেছি। এ দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের অনেক প্রাণহানি হয়েছে। অনেক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খাওয়ার পানির খুব অভাব দেখা দিয়েছিল। সুন্দরবনের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ অংশ বন নষ্ট হয়েছে। নানা প্রকার মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা, খরা ও ভূমিকম্পের ফলে অনেক ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। মানুষের বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় আমরা সেবা-শুধুধার মতো কার্যক্রম চালাব। 

এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াব। যেভাবে পারি তাদের সেবা, সহায়তা করব। এটাই হলো ইসলাম ও নৈতিকতার শিক্ষা। বাংলাদেশের লোকজন যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে।

আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত কৌশলগুলো অবলম্বন করব:

ক) যথাসম্ভব উঁচু জায়গায় বসতভিটা, গোয়ালঘর ও হাঁসমুরগির ঘর তৈরি করব। 

খ) ঘরের ভেতরে উঁচু মাচা তৈরি করে তার উপর খাদ্যশস্য, বীজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করব। 

গ) পুকুরের পাড় উঁচু করব। টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন যথাসম্ভব উঁচু স্থানে বসাব ।

ঘ) শুকনো খাবার যেমন চিঁড়া, মুড়ি, গুড় এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ঘরে মজুদ রাখব। 

ঙ) পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সাতারকাটা শেখাব । 

চ) বন্যার সময়ে যাতায়াতের জন্য নৌকা না থাকলে কলাগাছের ভেলা তৈরি করে নেব।

তাহলে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজে বাঁচা এবং অপরকে বাঁচানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

পরিকল্পিত কাজ :

ক) শিক্ষার্থীরা পরিবেশ সংরক্ষণের উপায়গুলো খাতায় লিখবে। 

খ) শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার কৌশলগুলো খাতায় লিখবে।

Content added By

অনুশীলনী

14
14

শূন্যস্থান পূরণ কর:

১) যার আচরণ ভালো সে সকলের সাথে ভালো ___ করে।

২) মানুষ আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি ___ দেখাবে।

৩) দেশপ্রেম ___ অঙ্গ।

৪) হিজরতের সময় মহানবি (স) তাঁর জন্মভূমি ___ অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন।

৫) সততা মানুষকে ___ দেয়।

৬) মায়ের ___ নিচে সন্তানের জান্নাত ৷

৭) চেষ্টা ও শ্রম ___ চাবিকাঠি  ৷

 

বাম পাশের শব্দগুলোর সাথে ডান পাশের শব্দগুলো মিলাও :

বামডান

১) তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই লোক, যার চরিত্র

২) যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া দেখায় না আল্লাহ তার প্রতি

৩) আমাদের জন্মভূমির নাম

৪) যে ক্ষমা করল তার জন্য আল্লাহর কাছে

৫) আমরা সকলে ডাষ্টবিনে

৬) তোমরা ভালো কাজে একে অপরকে

দয়া দেখান না

পুরস্কার রয়েছে

ময়লা ফেলব

সহযোগিতা করবে

সবচেয়ে সুন্দর

বাংলাদেশ

 

সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন:

১. মহানবি (স) সুন্দর চরিত্র সম্পর্কে কী বলেছেন? 

২. ‘সৃষ্টির সেবা’ কাকে বলে ? 

৩. মহানবি (স) মক্কাবাসীদের কিসের আহ্বান জানিয়েছিলেন?

8. ক্ষমাশীল ব্যক্তি কে? 

৫. মন্দ কাজ কাকে বলে? 

৬. যার মধ্যে সততা আছে, তাকে কী বলে? 

৭. আমরা পিতা-মাতার সাথে কীরূপ ব্যবহার করব? 

৮. আমরা পিতা-মাতার জন্য কী বলে দোয়া করব? 

৯. আমরা বাসার কাজের লোকদের সাথে কীরূপ ব্যবহার করব? 

১০. মহানবি (স) শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সম্পর্কে কী বলেছেন? 

১১. মানব জাতির আদিপিতা ও আদিমাতা কে কে ছিলেন? 

১২. প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?

 

বর্ণনামূলক প্রশ্ন:

১. আমরা কোন কোন মন্দ আচরণ থেকে দূরে থাকব?

২.  আমরা কীভাবে মানুষের সেবা করব? 

৩. কী কী উপায়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়? 

8. মহানবি (স) এর জীবনের ক্ষমার একটি আদর্শ কাহিনী উল্লেখ কর । 

৫. আমরা ভালো কাজে কীভাবে সাহায্য করব? 

৬. মন্দ কাজ সম্পর্কে মহানবি (স) কী বলেছেন ? 

৭. হযরত উমর (রা)-এর সততার পরিচয় দাও ৷ 

৮. আমরা পিতা-মাতার খিদমত করব কেন ? 

৯. মহানবি (স) গৃহকর্মীদের সম্পর্কে কী বলেছেন? 

১০. প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা কী কী কৌশল অবলম্বন করব?

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

দেশের গান করা
দেশে বাস করা
দেশকে দেখা
দেশকে ভালোবাসা ।
Promotion